To read full article click on the link:http://www.dailynayadiganta.com/?/detail/news/156489?m=0
বিগত ২১ সেপ্টেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস তথা ইন্টারন্যাশনাল ডে অব পিস। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে প্রায় ৩০০ দিনই বিভিন্ন প্রকারের আন্তর্জাতিক ও জাতীয় দিবস আমাদের দেশে পালিত হয়। জাতীয় ইতিহাস, জাতীয় সংস্কৃতি ও জনমানুষের আবেগের সাথে যেসব দিবস জড়িত, সেগুলো পালিত হয় গভীরভাবে, নিবিড়ভাবে ও ব্যাপকভাবে। আন্তর্জাতিক দিবসগুলো পালিত হয় অনেকটা আনুষ্ঠানিকতার আবরণে এবং ঢাকাকে কেন্দ্র করে। অতএব আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস অনেক ব্যাপকভাবে পালিত না হওয়ার কথা এবং হয়ও নি।তবে এই দিবসটির সাথে মানুষের হৃদয় ও আবেগ জড়িত। দেশে দেশে যেসব হানাহানি ও সঙ্ঘাত বিদ্যমান, সেগুলোকে নিরসন করার জন্য আন্তর্জাতিক মহলই চেষ্টা করে থাকে। এই চেষ্টার আনুষ্ঠানিক উদ্যোক্তা হলো জাতিসঙ্ঘ। জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সঙ্ঘাতরত পক্ষগুলোর মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা হয়; ইংরেজিতে বলা হয় ইন্টারন্যাশনাল পিস কিপিং ফোর্স। বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্বের অনেক স্থানে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। বস্তুত, গত দু-চার বছরে আন্তর্জাতিক পিস কিপিং মিশনে সৈন্য জোগানদাতা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। অতএব, ‘শান্তি’ নামক শব্দের সাথে, শান্তি নামক অনুভূতির সাথে এবং শান্তি স্থাপনের প্রক্রিয়ার সাথে বাংলাদেশের মানুষ সুপরিচিত।
‘মুভ ফাউন্ডেশন’ নামক একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আহ্বানে গত বুধবার ২১ সেপ্টেম্বর একটি কর্মশালায় উপস্থিত হয়েছিলাম। কর্মশালায় প্রায় ২৫ জন তরুণ ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পাঁচজন মাদরাসার জ্যেষ্ঠ ছাত্রও উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদ দমন প্রসঙ্গে তরুণ-তরুণীদের চিন্তাভাবনা এবং তাদেরই প্রস্তাবিত কর্মপদ্ধতিগুলোর সমন্বিত প্রকাশ ঘটানো। আমার দায়িত্ব ছিল উদ্বোধনী বক্তব্য দেয়া। মুভ ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত এরূপ কর্মশালায় এটি ছিল পঞ্চম পর্ব। তারা প্রতিটি পর্বেই বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড বা প্রেক্ষাপটের ছাত্রছাত্রীদের একত্র করে এরূপ কর্মশালা করে যাচ্ছেন। অত্যন্ত মহৎ উদ্যোগ। সাত দিন আগে সেই উদ্বোধনী বক্তব্যে যেমন স্বাগত জানিয়েছি, এখনো জানাচ্ছি। ওই কর্মশালার শিরোনাম ছিল- ‘সহনশীলতা, শ্রদ্ধাবোধ ও শান্তি’। আমরা যদি সহনশীল হই, তাহলে অন্যের মতকে সহ্য করতে পারব; আমার মতের সাথে দ্বিমত পোষণকারী ব্যক্তিদের মতকে সহ্য করতে পারব। আমি যদি সহনশীল হই, আমার সমালোচককে সহ্য করতে পারব; অন্যের ভুলত্রুটিকে সহ্য করতে পারব তথা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভুলের জন্য উত্তেজিত হবো না এবং চরম শাস্তি দেবো না। যদি সহনশীল হই, তাহলে আমার অভাবকে প্রকটভাবে দেখব না, আমি ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করব। আমার অভাবটি কোন কোন আঙ্গিকে হতে পারে? সাংসারিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য টাকা-পয়সার সঙ্কট থাকতে পারে; বুদ্ধিমান সহনশীল বন্ধুবান্ধবের অভাব থাকতে পারে; আমার কোনো কাজে উপদেশ ও পরামর্শ দেয়ার জন্য গুরুজন বা মুরব্বির অভাব থাকতে পারে; কোনো একটি কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য সময়ের অভাব থাকতে পারে। অনেক সময় আমার সময় থাকলেও, আমার বন্ধুবান্ধব থাকলেও বা আমার গুরুজন থাকলেও আমার সহকর্মীদের বা অনুসারীদের বা আমার কনিষ্ঠদের এই বিষয়গুলোর অভাব থাকতে পারে। এখানেই আমাকে সহনশীল হতে হবে। অন্যের অভাবটিকে অসামাজিকভাবে, উৎকটভাবে, নেতিবাচকভাবে বিদ্রƒপাত্মকভাবে কোনো সময় যেন উপস্থাপন না করি।
শ্রদ্ধাবোধ এমন একটি জিনিস, যেটি আমাদের সামাজিক সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ছোট্ট দু’টি উদাহরণ দেবো। ১৯৮২ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৮৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১৩ মাস ইংল্যান্ডে ছিলাম সরকারি সামরিক বৃত্তি নিয়ে সামরিক লেখাপড়ার জন্য। সেখানে অবস্থান সপরিবারে ছিল। আমার ছেলেমেয়েরা তখন নিতান্তই ছোট। লন্ডন মহানগরী থেকে ৪০-৪৫ মাইল দক্ষিণে, সারে কাউন্টিতে অতি ক্ষুদ্র দু’টি সামরিক স্থাপনা ছিল। একটি ছিল রয়েল মিলিটারি অ্যাকাডেমি স্যান্ডহার্স্ট এবং অপরটি ছিল দি রয়েল স্টাফ কলেজ ক্যাম্বারলি। আমি ছিলাম স্টাফ কলেজের ছাত্র। আমার মতো যারা বিদেশী, তাদেরকে স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতি, সামাজিক রীতিনীতি ইত্যাদির সাথে সহজে খাপ খাওয়াতে একটা ব্যবস্থা চালু ছিল। স্থানীয় অনেকগুলো পরিবার, একটি করে বিদেশী পরিবারকে স্পন্সর করত ওই এক বছর সময়ের জন্য। তাদের কোনো আর্থিক ব্যয় ছিল না। তাদের ছিল সামাজিক দায়িত্ব। এ সময় মনোযোগ এবং কিছুটা শ্রম ব্যয় করত তারা বিদেশী পরিবারগুলোর অনুকূলে। আমি এবং আমার পরিবারের জন্য যে পরিবারটি সিভিলিয়ন স্পন্সর হিসেবে স্বেচ্ছা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল, সেই পরিবারের ভদ্রলোকের নাম ছিল পিটার এবং তার স্ত্রী ডায়না। তাদেরও দু’টি শিশু কন্যাসন্তান ছিল যথাক্রমে সায়রা ও রেবেকা। ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। তারা আমাদের দুই শিশুসন্তানকে সন্তানতুল্য স্নেহে দেখেছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটি আমি উল্লেখ করতে চাচ্ছি, সেটি নিম্নরূপ। আমার কন্যা এবং আমার ছেলে উভয়েই পিটারকে ডাকত আঙ্কেল এবং ডায়নাকে ডাকত আন্টি। কারণ বাংলাদেশী ছেলেমেয়েরা তাদের বাপ-মায়ের সমবয়সীদের বা তাদের বড়দেরকে আঙ্কেল ডাকতে অভ্যস্ত। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে কনিষ্ঠরা সচরাচর জ্যেষ্ঠ কোনো ব্যক্তিকে নাম ধরে ডাকে না। এটিই আমাদের দেশের বা আমাদের সমাজের রেওয়াজ। যদি অনেক বেশি বয়স্ক ব্যক্তি হয়, তাহলে যারা অনেক কনিষ্ঠ, তারা দাদু বা নানু বলে সম্বোধন করে অথবা বয়সের তারতম্য যদি অল্প হয় তাহলে আপা বা ভাইয়া বলে সম্বোধন করে। কিন্তু সেই ইংল্যান্ডে পিটার ও ডায়নার সন্তানদ্বয় আমাকে ডাকত মিস্টার ইবরাহিম এবং আমার স্ত্রীকে ডাকত শুধু নাম ধরে, ফোরকান। প্রথম সাক্ষাতের পর প্রথম ৫ মিনিট আমার লেগেছিল এই নতুন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ধাতস্থ হতে। এটিই ওদের দেশের জন্য স্বাভাবিক। অর্থাৎ শ্রদ্ধাবোধ নামক জিনিসটি আমাদের দেশে আমাদের সংস্কৃতিতে গভীর ও নিবিড়ভাবে প্রোথিত ছিল; তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা গেছে। মুভ ফাউন্ডেশনের কর্মশালায় এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
কর্মশালার শিরোনাম বা আরাধ্য বস্তুর তৃতীয়টি ছিল শান্তি। জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদ অশান্তির উৎস এবং জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদের উৎপত্তি হয় অশান্তি থেকে; অতএব অশান্তি দূর করে শান্তি স্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। শান্তি অনেক আঙ্গিকে তথা অনেক স্তরে হতে পারে, যথা- ব্যক্তিগত পর্যায়ে, পারিবারিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র সামাজিক গণ্ডিতে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর গণ্ডিতে এবং দেশ বা জাতির পর্যায়ে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কথা তো অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। গত দশ-বারো বা পনেরো দিনের সংবাদপত্রের শিরোনামগুলো অথবা টেলিভিশন সংবাদের শিরোনামগুলো যদি পাঠক আপন স্মৃতি থেকে এ মুহূর্তে টেনে সামনে তুলে আনেন, তাহলে কত প্রকারের অশান্তির খবর যে আপনাকে গুনতে হবে, সেটা নিজেও কল্পনা করতে পারছেন না; আমিও পারছি না। শুধু মৃত্যুর খবর যদি দেখেন তাহলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর, নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আক্রমণের কারণে মৃত্যুর খবর, মসজিদের ভেতরে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর কারণে মৃত্যুর খবর, প্লেন দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার খবর, ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর ইত্যাদির ব্যাপকতা এবং সংখ্যা পরিমাপ করে কূল পাওয়া যাবে না। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে হত্যা করছে, পিতামাতা সন্তানকে হত্যা করছে, সন্তানগণ পিতামাতাকে হত্যা করছে, ভাই আরেক ভাইকে হত্যা করছে, একজন আরেকজন প্রতিবেশীকে হত্যা করছে, তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে অপরাধী নিহত হচ্ছেÑ এগুলো হলো মৃত্যুর বিভিন্ন রূপ। সবগুলো হলো অশান্তির ফসল। কোনো ব্যক্তি যদি তার অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান নিয়ে বিক্ষুব্ধ থাকে, তাহলে সে মানসিক অশান্তিতে ভোগে। কোনো পরিবার যদি তার প্রতিবেশী অন্য পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থানকে হিংসা করে, তাহলে পারিবারিকভাবে তারা অশান্তিতে থাকে। পরিবারের অভ্যন্তরেই যদি একজন আরেকজনকে সন্দেহ বা অবিশ্বাস করে, তাহলে সেখানে অশান্তি থাকে। কোনো ছাত্র যদি বিনা পরিশ্রমে ভালো ফল করতে চায়, কিন্তু পেরে ওঠে না, তখন সে ভোগে অশান্তিতে। মুভ ফাউন্ডেশন তাদের অন্যতম লক্ষ্যরূপে বর্ণনা করেছে শান্তিকে। শান্তি পৃথিবীর কাম্য, সবার কাম্য। সুতরাং প্রথমে নিজের অন্তরে শান্তি স্থাপন করতে হবে, অতঃপর পারিবারিক পরিমণ্ডলে, এরপর সামাজিক নিকট বেষ্টনীর ভেতরে এবং সর্বশেষ, জাতীয় বা রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে শান্তি স্থাপনের জন্য চেষ্টা করতে হবে।
সবপর্যায়েই চেষ্টা করতে হবে তরুণদের নিয়ে। কারণ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর কম-বেশি ৬০ শতাংশের বয়স চল্লিশের নিচে। এ দেশের কর্মশক্তি, এ দেশের প্রাণশক্তি তারাই। অমঙ্গল বা অকল্যাণ যদি ঘটে, সেটাও তাদেরই মাধ্যমে ঘটে। অতএব, তরুণ সম্প্রদায়কে শান্তি স্থাপনের প্রক্রিয়ায়, শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধি করার এবং সহনশীলতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট করা জরুরি। আমরা বয়োজ্যেষ্ঠগণ যদি ওই প্রক্রিয়া ডিক্টেট করি, সেটার ফলাফল এক রকম হবে। অপরপক্ষে যদি তরুণদের পরামর্শ ও প্রস্তাব মূল্যায়ন করে প্রক্রিয়া নির্ধারণ করি, সেটার ফলাফল আরেক রকম হবে। দ্বিতীয় পন্থাটি বেশি গঠনমূলক ও টেকসই। সে জন্যই আগ্রহভরে ওই কর্মশালায় গিয়েছিলাম।
মুভ ফাউন্ডেশনের কর্মশালার শিরোনামের তিনটি শব্দের ক্ষুদ্র পরিমাপের ব্যাখ্যা দিলাম। নিজে যে উপদেশগুলো দিয়েছিলাম, তরুণ সম্প্রদায়ের জন্য সেই দিন, ওইগুলো থেকে দু’টি উপদেশ এখানে উদ্ধৃত ও স্বল্পমাত্রার আলোচনা করছি। প্রথম উপদেশ ছিল ইন্টারঅ্যাকশন, মানে হলো- মেলামেশা। পিতামাতা যেন সন্তানদের সাথে মেলামেশার জন্য সময় ব্যয় করেন, বন্ধুবান্ধব যেন পারস্পরিকভাবে মেলামেশার জন্য বা শিক্ষকগণ যেন ছাত্রছাত্রীদের সাথে শ্রেণিকক্ষ ছাড়াও আরো ক্ষেত্রে মেলামেশা করেন, যথা খেলার মাঠ বা সাংস্কৃতিক অঙ্গন। ইন্টারঅ্যাকশনের কারণে একজন আরেকজনকে বুঝতে পারে বেশি। যদি একজন আরেকজনকে বুঝতে পারে, তাহলে যে শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য তাকে শ্রদ্ধা দেয়া যায়, যে সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্য তাকে সহানুভূতি দেয়া যায় এবং যাকে সান্ত্বনা দেয়া প্রয়োজন, তাকে সান্ত্বনা দেয়া যায়। ইন্টারঅ্যাকশনের কারণে যেকোনো কিছু ভালো জানে, তার কাছ থেকে ওই ভালো জিনিসটি জানা যায়। ইন্টারঅ্যাকশনের কারণে কোনো ব্যক্তির যদি কোনো বদ অভ্যাস থাকে, তাহলে সেটি সম্বন্ধেও অবহিত হওয়া যায় এবং বদ অভ্যাসটি দূর করার জন্য চেষ্টা করা যায়। ইন্টারঅ্যাকশন হওয়া উচিত খোলা মনে। ইন্টারঅ্যাকশনের সময় পরস্পরের প্রতি সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয় যে উপদেশটি দিয়েছিলাম সেটি ছিল পরিবেশ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া। ইন্টারঅ্যাকশনের মাধ্যমে অপরের আগ্রহ, চিন্তা ইত্যাদি সম্বন্ধে জানলে সেই পরিবেশে যাওয়া উচিত কি উচিত না, সেই সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়। অনেক পরিবেশ আছে যেগুলো সম্বন্ধে কারো মনে কোনো সন্দেহ নেই, যথা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার সময় পরিবেশটি হয় হৈ-হল্লোড় ও উৎফুল্লতার। পাড়া-মহল্লায় কোথাও কোথাও রাত ৯টা-১০টার পর হালকা আলোয় বা আবদ্ধ ঘরে পরিবেশ হয় জুয়া খেলার ও মদপানের। তাহলে একজন ব্যক্তি বা একজন তরুণ অবশ্যই তার পরিবেশ সম্বন্ধে সচেতন হবে। যে পরিবেশে মেলামেশা করে, সেখানে অস্বাভাবিক কিছু দেখলে, কোনো ব্যক্তির অস্বাভাবিক কোনো আগ্রহ দেখলে, অস্বাভাবিক কোনো বন্ধুপরায়ণতা দেখলে, অস্বাভাবিক কোনো টাকা-পয়সা খরচের প্রবণতা দেখলে, সেটাকে মনে মনে প্রশ্ন করতে হবে এবং যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনে পরিহার করতে হবে।
বিশ্ব, আমাদের অঞ্চল এবং আমাদের দেশ কঠিন কঠোর সময় পার করছে। উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদের যেটুকু বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল, সেটাকে মোকাবেলা করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং আরো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও সরকারকে সহনশীলতা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদ দমনের নামে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন চূড়ান্তপর্যায়ে সুফল দেবে না। পৃথিবীর কোথাও এরূপ দমনপ্রক্রিয়া চূড়ান্তপর্যায়ে কোনো সুফল প্রদান করেনি। আমরা বাংলাদেশে শান্তি চাই, অগ্রগতি চাই। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক অঙ্গনে সহনশীলতা ও শ্রদ্ধা।
লেখক : মেজর জেনারেল (অব:); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
ই-মেইল : mgsmibrahim@gmail.com
For enewspaper: http://www.enayadiganta.com/index.php?archive=28-09-2016
Leave a Reply