মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর করা এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে সক্রিয়।
আর এই শিক্ষার্থীদের সিংহ ভাগই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। যদিও বাংলাদেশের অনেক মাদ্রাসাতেই কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ রাখে।
এই জরিপটি চালিয়েছে বেসরকারি সংস্থা মুভ ফাউন্ডেশন।
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল হক বলেছেন, বাংলাদেশের ১২টি জেলার কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার ৮২৫ জন শিক্ষার্থীদের ওপর এ জরিপ করা হয়েছে।
কেন এই জরিপ
মুভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল হক জানিয়েছেন, “জরিপের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের কওমি এবং আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কিভাবে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সেটা জানা।
সেই সঙ্গে কোন বিষয়গুলোতে তারা আগ্রহী, তারা কী ধরণের পোস্ট দেয় বা শেয়ার করে, উগ্রবাদ ও সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে তাদের কতটা ধারণা আছে, সে সম্পর্কে ধারণা পেতে চেয়েছি আমরা।
বাংলাদেশে এর আগে এ ধরণের কোন জরিপ হয়নি।”
তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু সাধারণ মাধ্যম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক কাঠামোতে পার্থক্য আছে, সে কারণে সামাজিক মাধ্যমে তাদের আচরণও ভিন্ন হয়।
সাধারণ মাধ্যম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পার্থক্য
মিঃ হক জানিয়েছেন, “মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ মাধ্যম শিক্ষার্থীদের প্রথম পার্থক্যই হচ্ছে, কম্পিউটার বা মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহারের অপ্রতুলতা।
অর্থাৎ একজন সাধারণ মাধ্যম শিক্ষার্থীর হয়তো বাড়িতে বা স্কুলে কম্পিউটার থাকে, অথবা পরিবারে স্মার্টফোন থাকে, যেটা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনেক কম, কোথাও বা একেবারেই নেই।”
“আমরা দেখেছি, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ৬৫ শতাংশই সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়।
তাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ মোবাইল ফোন বা ট্যাবের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন। এছাড়া ১২ শতাংশ কম্পিউটারে, পাঁচ শতাংশ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে, এবং পাঁচ শতাংশ সাইবার ক্যাফেতে যায় ফেসবুক ব্যবহারের জন্য।”
যেহেতু মাদ্রাসাগুলোর ভেতরে মোবাইল ফোন ব্যবহারে কড়াকড়ি রয়েছে, শিক্ষার্থীরা এ ক্ষেত্রে গোপনীয়তার আশ্রয় নেয়।
সামাজিক মাধ্যমে কী খোঁজেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা?
মুভ ফাউন্ডেশন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, রাজশাহী, সিলেট, হবিগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, গাইবান্ধা এবং পঞ্চগড়ের ৩৬টি কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসায় এই জরিপ চালিয়েছে।
মিঃ হক জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে তারা দেখেছেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মূল আগ্রহের বিষয়ের মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় ও সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু সম্পর্কে জানা।
এছাড়া বিনোদন এবং খেলাধুলার খবর নিয়েও আগ্রহী তারা।
“আমাদের একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা উগ্রবাদে আগ্রহী হবে।
যদিও অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালানো হয়েছে, কিন্তু জরিপে আমরা তেমনটা দেখতে পাইনি।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কৌতূহল থেকে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন।”
এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ের প্রতি আগ্রহী।
এছাড়া ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী খেলাধুলা, ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী বিনোদন, এবং সাত শতাংশ শিক্ষার্থী রাজনৈতিক বিষয়ের প্রতি আগ্রহী।
“তবে ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, কওমি মাদ্রাসার ছাত্রীদের মধ্যে ৯৬ শতাংশই ধর্মীয় শিক্ষামূলক বিষয়ে আগ্রহী।”
কী ধরণের বিষয় শেয়ার করে শিক্ষার্থীরা
ঢাকার গাজীপুরের একটি মাদ্রাসার আলীম পরীক্ষার্থী একজন ছাত্রী জানিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করলেও সাধারণত তিনি বা তার বন্ধুরা চেষ্টা করেন কোন পোষ্ট শেয়ার না করতে।
“যদি কখনো করি, তাহলে বেশির ভাগ সময় সেটা হয় আমাদের জীবন ও আচার আচরণ সম্পর্কে আমাদের ধর্মে কী বলা হয়েছে, সে সংক্রান্ত কিছু।
অথবা কোন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের কোন উক্তি যদি পাই, তাহলে আমরা পোষ্ট করি।”
মুভ ফাউন্ডেশনের মিঃ হক জানিয়েছেন, জরিপে তারা দেখেছেন শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি শেয়ার করে ধর্মীয় শিক্ষামূলক বা ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়াবলী।
“জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই সাইবার ক্রাইম সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন অপপ্রচার, উগ্রবাদের উস্কানি বা প্রচারণা এবং কারো চরিত্র হনন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের ধারণা খুব কম।
এসবের জন্য যে একটি আইন আছে, এবং সে আইনের অধীনে এ ধরণের অপরাধের জন্য যে বিচার হতে পারে, সেটা সম্পর্কে তারা খুব সামান্যই জানে।”
You may also read it in this link: https://www.bbc.com/bengali/news-48754323
Leave a Reply